১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

গোলাপগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের হয়রানি: আত্মগোপনে শাফিনা আক্তারের পরিবার

admin
প্রকাশিত জুন ১৯, ২০২৫, ০৩:৫৮ অপরাহ্ণ
গোলাপগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের হয়রানি: আত্মগোপনে শাফিনা আক্তারের পরিবার

Manual5 Ad Code

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি:

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার শেখপুর গ্রামে যুব মহিলা লীগ নেত্রী ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শাফিনা আক্তার এবং তার ছোট বোন ফারেহা জান্নাতকে ঘিরে চলমান হয়রানি, হামলা ও হুমকির ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাগুলোর পর, এখন পুলিশ ও স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতপন্থী ক্যাডারদের পক্ষ থেকে শাফিনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ওপরও চরম চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বারবার পুলিশের হানা, পরিবার ঘরছাড়া

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাফিনা আক্তার ও ফারেহা জান্নাতকে না পেয়ে তাদের চাচাতো ভাই মাহিন আহমেদ ও তার পরিবারের ওপর বাড়ছে হয়রানি। পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই শেখপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে, যদিও সেখানে এখন কেউ থাকে না। কারণ, অনেক আগেই মাহিন আহমেদ তার পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

একজন প্রতিবেশী জানান, “ওই বাড়িতে এখন তালা ঝুলছে। পুলিশ ও ক্যাডাররা যখন তখন আসে, আশপাশের মানুষজন পর্যন্ত আতঙ্কে থাকে। এই অবস্থা আর মানা যাচ্ছে না।”

Manual2 Ad Code

এর আগে, সন্ত্রাসী হামলা ও প্রশাসনের গ্রেপ্তারি তৎপরতা থেকে রক্ষা পেতে ২১ মে ২০২৫ তারিখে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান শাফিনা আক্তারের ছোট বোন ফারেহা জান্নাত। পরিবার ও ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সময়মতো দেশত্যাগ না করলে হয়তো প্রাণেই রক্ষা পেতেন না তিনি।

শাফিনা ও ফারেহার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একাধিক মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে তাদের অবস্থান সর্বক্ষণ নজরদারির মধ্যে ছিল। আত্মগোপনের পর, চাচাতো ভাই মাহিন আহমেদের সহায়তায় গোপনে দেশ ত্যাগ করেন ফারেহা।

সন্ত্রাসী হামলা ও কোটি টাকার ক্ষতি

উল্লেখ্য, শাফিনা আক্তার ও ফারেহা জান্নাতের অনুপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়ি ও ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একযোগে হামলা চালায়। মূল্যবান আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক পণ্য এবং নগদ অর্থ লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে পরিবারের দাবি।

রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে টার্গেট

শাফিনা আক্তারের মা ও ফারেহা জান্নাত বলেন, “আমরা শুধুমাত্র আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলেই টার্গেট হচ্ছি। আমাদের বেঁচে থাকারই সুযোগ নেই—এই কারণেই দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে।”

Manual6 Ad Code

জোরপূর্বক বিয়ের হুমকি ও সামাজিক অসম্মান

ঘটনার আরও একটি ভয়ংকর দিক হলো—স্থানীয় এক ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে শাফিনা ও ফারেহাকে জোরপূর্বক বিয়ের হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয়, “তাদের আমাদের হাতে তুলে দাও, না হলে মেরে ফেলবো।” এই ধরনের বক্তব্য শুধুমাত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনই নয়, সামাজিকভাবে চরম অসম্মানেরও নামান্তর।

পুলিশি হুমকি ও প্রশাসনের নিরবতা

Manual5 Ad Code

শাফিনার চাচাতো ভাই মাহিন আহমেদ জানান, থানায় বারবার অভিযোগ জানাতে গিয়েও কোনো সহায়তা পাননি, বরং পুলিশ তাকে হুমকি দিয়ে জানায়—“শাফিনার নামে ৮টি, ফারেহার নামে ৬টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। আমরা যেখানেই পাবো, ধরে ফেলব। এমনকি তোমাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।”

এই অবস্থায় পুরো পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে।

জনমনে আতঙ্ক ও ক্ষোভ

ঘটনার এক মাস পার হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং, পুলিশ ও বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের দাপটে পুরো এলাকা এখন আতঙ্কিত। স্থানীয়রা বলছেন, “সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালাচ্ছে, পুলিশ দেখেও কিছু করছে না। আমাদের মনে হচ্ছে, তারা একাট্টা হয়ে নিরীহ মানুষদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।”

সচেতন মহলের আহ্বান

Manual4 Ad Code

সচেতন নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই ঘটনাগুলো দেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা তুলে ধরছে। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে একটি পরিবার যদি নিজের দেশেই নিরাপদ না থাকে, তবে তা গোটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। তারা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, দোষীদের গ্রেপ্তার এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code