ডেস্ক রিপোর্ট::
দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ তরুণ বিশ্বস্ত ছাত্রলীগ, যুবলীগকর্মীকে গেরিলা ট্রেনিং করানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় প্রধান প্রশিক্ষকসহ বেশ কয়েকজনকে আটকের পর গেরিলা ট্রেনিং সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনীর একজন কর্মরত মেজর ও সাবেক কিছু সরকারি কর্মকর্তা গেরিলা কার্যক্রমে জড়িত বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কিছু দিন ধরেই সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কিছু ব্যক্তির সহায়তায় ‘বঙ্গবন্ধু গেরিলা বাহিনী’ গড়ে তুলে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা চালায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করেছে, যতক্ষণ না জুলাইয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকার্য সম্পন্ন না হয়। কিন্তু দলটির শীর্ষস্থানীয় অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও যারা এখনও দেশে অবস্থান করছেন তাদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
গত এক বছরে এদের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান না হলেও বা প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ না পেলেও তারা বসে নেই। বিভিন্ন সূত্রের খবর মোতাবেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর চাউর হয়েছে, আগামী ৫ আগস্ট দেশে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে দলটি। এ জন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থিত ও সামর্থ্যবান বিশাল একটা গ্রুপকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। যারা ওই প্রশিক্ষণ মোতাবেক দেশে অরাজকতা তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করবে।
গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর সর্বত্র তোলপাড় চলছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে সরকার নড়েচড়ে বসেছে। ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান।
আওয়ামী লীগের একটা অংশের নেতাকর্মী দেশে-বিদেশে ছদ্মবেশে তৎপর রয়েছেন। গোপনে তারা একত্র হয়ে সহিংসতা বা হামলার পরিকল্পনা করতে পারেন—এমন আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারাদেশে আগামী ১১ দিন বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) আশঙ্কা করছে, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে কেন্দ্র করে অনলাইন ও অফলাইনে সংঘবদ্ধ প্রচারণার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে পারে। এ সময় দলটির কিছু নেতাকর্মী সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, বিশৃঙ্খলা কিংবা ভাঙচুর চালাতে পারে বলেও ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার (২৮ জুলাই) দেশের বিভিন্ন পুলিশের ইউনিটে একটি বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে এসবি। এসবির রাজনৈতিক উইংয়ের অ্যাডিশনাল ডিআইজি সই করা এক চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠি পাঠানো হয়েছে ডিএমপি কমিশনার, সিটি এসবি, বিভাগীয় উপ-পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম ও খুলনার স্পেশাল পুলিশ সুপারসহ দেশের সব জেলা পুলিশ সুপারের কাছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো পয়লা জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এই সময়ে ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো দেশব্যাপী অনলাইন ও অফলাইনে উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে বা উসকানি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টাও হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব ইউনিটকে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনের ওপর নজরদারি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার এবং সাইবার গোয়েন্দা কার্যক্রম তীব্র করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়েছে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ সন্দেহভাজন সব যানবাহনে তল্লাশি, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন, বিমানবন্দরের আশপাশে নজরদারি এবং মোবাইল পেট্রোল বাড়াতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, সাইবার পেট্রোলিং এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারের নির্দেশও রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কোর গ্রুপের একটি বড় অংশ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এ চক্রের কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর এমন অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে। সরকারের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র ওই গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিতও করেছে।
ওই সূত্র দাবি করে, অবাক হওয়ার বিষয় হলো—যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের একটি অংশ অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। যারা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া প্রশিক্ষণ নিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীও। প্রশিক্ষণ হয়েছে দিল্লি, কলকাতা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা এবং গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। চূড়ান্ত সফলতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।
এরই অংশ হিসাবে ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ওই প্রশিক্ষণ চলাকালে কনভেনশন সেন্টারে দেওয়া হয় সরকারবিরোধী নানা স্লোগান।
প্রাথমিকভাবে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কনভেনশন হলে প্রশিক্ষণের তথ্য পেয়ে পুলিশ দুইজনকে আটক করে। সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জে গেরিলা বাহিনী প্রধানের কোটালিপাড়া থানার ওসিকে ফোন করার পরই টনক নড়ে পুলিশের। আটক করা হয় সন্দেহভাজন একজনকে। তার তথ্য মতে ১৩ জুলাই অভিযান চালায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আটক করে—সোহেল রানা (৪৮) ও শামীমা নাসরিন শম্পা (৪৬)।
সোহেল রানার বাবার নাম আব্দুস সোবহান গোলন্দাজ। বাড়ি বরগুনার তালতলী থানার মৌপাড়া গ্রামে। রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে তার বাসা। গ্রেফতারকৃত শম্পার স্বামী আহাদুজ্জামান একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বড়াশুর গ্রামে। বাবার বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার বাজরা গ্রামে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে—জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্র ওই গণমাধ্যমকে জানায়, গ্রেফতারকৃতরা এ বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এসব তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, ঢাকা দখল করাই ছিল তাদের প্রধান টার্গেট। এজন্য তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। পরিকল্পনা মোতাবেক শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ থেকে তালিকাভুক্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী একযোগে ঢাকা চলে আসবেন। সবাই সমবেত হবেন রাজধানীর শাহবাগে। শাহবাগ মোড় দখল করে জনমনে আতঙ্ক তৈরিসহ জনগণকে জানান দেওয়া হবে যে—আওয়ামী লীগের কয়েক লাখ লোক ঢাকা দখলে নিয়ে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) কামরুল হাসান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, “তদন্তের স্বার্থেই এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। একটু গুছিয়ে নিই, পরে বলব।” তিনি বলেন, “এ ঘটনায় শুধু ডিবি নয়, আরও কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে।”
এদিকে সেনা হেফাজতে আটক মেজর বিএ-৯৫৩৬ সাদেককে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গত ২০ জুলাই উত্তরা থেকে তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন