ডেস্ক রিপোর্ট ::
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ঘটনায় দেখা যাচ্ছে মুসলিম নারীদের টার্গেট করে সংগঠিত ফাঁদে ফেলার অভিযোগ। ভোলায় মুসলিম পরিচয়ে বিয়ে করে ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ, গাজীপুরে ১৩ বছরের এক কিশোরীর ওপর ভয়াবহ নির্যাতন, বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিকৃত যৌন বর্ণনা এবং সর্বশেষ টঙ্গি থেকে এক মসজিদের খতিব অপহরণের পর পঞ্চগড়ে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনা—সব মিলিয়ে উঠছে নতুন আশঙ্কা: এগুলো কি বিচ্ছিন্ন অপরাধ, নাকি পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র?
স্থানীয় সূত্র ও পর্যবেক্ষকদের দাবি, একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদী চক্র মুসলিম মেয়েদের লক্ষ্য করে ‘ভাগোয়া লাভ ট্র্যাপ’ বা ‘গেরুয়া প্রেমের ফাঁদ’ নামে একটি সংগঠিত কৌশল ব্যবহার করছে। তাদের মতে, এটি কেবল প্রেম বা সম্পর্ক নয়—বরং এক ধরনের সাম্প্রদায়িক যৌন সহিংসতা, যার মূল উদ্দেশ্য মুসলিম নারীদের মানহানি, ধর্মান্তর, এমনকি পাচার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া।
অপহৃত খতিবের অভিযোগ, তিনি মসজিদে ইসকন ও ভাগোয়া লাভ ট্র্যাপ নিয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেওয়ার পর থেকেই হুমকি পান। তার দাবি, ‘ইসকন নেতার পক্ষে কথা বলার’ জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয় এবং অস্বীকার করায় অপহরণ করা হয়। পুলিশ বলছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং বিষয়টি “গভীরভাবে পর্যবেক্ষণাধীন”।অন্যদিকে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যখন কোনো ধর্মীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তখন গণমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, কিন্তু যখন অভিযুক্ত হন হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তখন নীরবতা লক্ষ্য করা যায়—এটিই সন্দেহকে গভীর করছে।
গাজীপুরের ১৩ বছরের কিশোরীর ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগকারীদের দাবি, দুই মাস ধরে নির্যাতনের শিকার এই কিশোরীর ‘সম্মতি’ দেখিয়ে ঘটনাকে প্রেমের সম্পর্ক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে—যা ন্যায়বিচার ব্যাহত করতে পারে।
অন্যদিকে বুয়েটের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিষিদ্ধ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছদ্মনামে নারীসহপাঠীকে ধর্ষণ ও বিকৃত যৌনাচারের বর্ণনা দেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিকৃত মনোভাব একই উগ্র সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার ফল, যেখানে মুসলিম নারীকে “ভোগ্যপণ্য” হিসেবে দেখা হয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো কিছু হিন্দুত্ববাদী গ্রুপের স্ক্রিনশটে মুসলিম নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য দেখা গেছে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এমন মানসিকতা শুধু নারী নির্যাতনই নয়, বরং বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপরও সরাসরি আঘাত।
আইন ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযোগগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। যদি এগুলোর মধ্যে সংগঠিত নেটওয়ার্কের প্রমাণ মেলে, তবে তা দেশের ধর্মীয় সহাবস্থানের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। একইসঙ্গে অপ্রমাণিত গুজব বা সাম্প্রদায়িক উসকানিতেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
প্রতিবেদনটি দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে নেয়া।<