১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি বন্ধ করতে ভোক্তা অধিকারের নির্দেশ

admin
প্রকাশিত জুলাই ১৪, ২০২৫, ০৭:২৫ অপরাহ্ণ
মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি বন্ধ করতে ভোক্তা অধিকারের নির্দেশ

Manual5 Ad Code

ডেস্ক রিপোর্টঃ
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি
অবশেষে দেশের বাজারে অস্তিত্বহীন জাতের চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মিনিকেট চাল বাজার থেকে তুলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ধানের জাতের নামে চালের নামকরণ করে বাজারজাত করণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

রোববার মিনিকেট চাল বাজারজাতকারী ১৪টি কর্পোরেট কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বৈঠকে ডাকা ১৪টি কর্পোরেট কোম্পানির পক্ষে অন্তত ২৭ জনের মতো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা।

Manual5 Ad Code

এর আগে গত ২৩ জুন দৈনিক আমার দেশ এ ‘বিক্রি অব্যাহত মিনিকেট চাল, প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তা’ প্রতিবেদন প্রকাশের নড়েচড়ে ওঠে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরই প্রেক্ষিতে ধানের জাতের অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও মিনিকেট চালের বাজারজাত বন্ধে পদক্ষেপ নেয় সংস্থাটি। সংস্থাটি মিনিকেট চাল বাজারজাতের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোকে নোটিশে ডেকে গতকাল রোববার বৈঠক করে।।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান আমার দেশকে বলেন, খাদ্যবিভাগের খাদ্য তালিকায় মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের কোনো উল্লেখ নেই। এছাড়া এ ধরনের ধানের জাতেরও কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ বেশ কিছু কোম্পানি মিনিকেট চালসহ আরো কিছু চাল বাজারজাত করছে। রোববার আমরা ওইসব কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডেকে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের অনেক ধরনের কথা শুনেছি, কিন্তু আমরা খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালার আলোকে মিনিকেট বলে কোনো ধানের জাত আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে অনেক আলোচনার পর তারা তাদের ভুল স্বীকার করে নেন। তারা কিছুটা সময় চাইলে আমরা তাদেরকে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি তারা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন।

কোম্পানিগুলো যদি ১৫ দিনের মধ্যে মিনিকেট চাল বাজার থেকে তুলে না নেয় তাহলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী অস্তিত্বহীন জাতের চাল বাজারজাত করা সুস্পষ্ট প্রতারণা। সেহেতু ১৫ দিনের মধ্যে কোম্পানিগুলো অস্তিত্বহীন জাতের মিনিকেটসহ অন্যান্য চাল বাজার থেকে তুলে না নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান আরো বলেন, কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন নাজিরশাইল বলে ধানের জাত আছে। আমরা বলছি যদি ধানের জাত থাকে তবে সংশ্লিষ্ট জাতের নাম দিয়ে চাল বিক্রি করতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ধানের জাত না থাকলে মিনিকেট বলেন আর নাজিরশাইল বলেন কোনো জাতেরই চাল বিক্রি করা যাবে না। এটাই আমাদের সুস্পষ্ট কথা।

Manual8 Ad Code

নাম ও পদবি প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এমন একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, বৈঠকে উপস্থিত কোম্পানির প্রতিনিধিরা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেছে যে এসব জাতের ধানের অস্তিত্ব আছে তাই তারা বিক্রি করছে। কোম্পানির একজন প্রতিনিধি বলেন, ভারতে মিনিকেট ও নাজিশাইল জাতের ধান আছে। এর জবাবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে বলা হয়- ভারতে থাকলে আমাদের দেশে তো এ জাতের ধান নেই তাহলে এ জাতের চাল বিক্রি হয় কী করে? অপর একজন কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, ৩০ বছর আগে নাকি এদেশে মিনিকেট চাল ছিল। এর জবাবে বলা হয়- ৩০ বছর আগে ছিল কিনা তা জানা নেই, বর্তমানে তো এ জাতের ধান নেই ফলে এটি বাজারজাতের কোনো যৌক্তিকতা কিংবা আইনগত ভিত্তি নেই।

প্রসঙ্গত, মিনিকেট চালের নামে সস্তা চাল বেশি দামে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ লাভ করছেন মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কোম্পানিগুলো।

Manual7 Ad Code

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মিল মালিকরা ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৯ জাতের ধান থেকে পাওয়া চাল দিয়ে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল তৈরি করছেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৯ এই দুটি জাতের ধানই সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। সাধারণত ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে এই চাল বিক্রি হয়। অন্যদিকে, বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি।

মিনিকেট চাল নিয়ে খোঁজখবর ও গবেষণার জন্য গত কয়েক বছরে সরকার বেশকিছু কমিটি গঠন করলেও বাস্তবে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। চালের বাজারে বিশাল সিন্ডিকেটের ফলে বন্ধ হয়নি চালের এই অসাধু ব্যবসা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা, খাদ্য পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ ইউনিট (এফপিএমইউ) ২০২০ সালে একটি জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায়, আধুনিক অটো রাইস মিলের মালিকরা মেশিনের মাধ্যমে চালের আকার পরিবর্তন করেন এবং পলিশ করে চালকে চকচকে রূপ দেন। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘রাইস মিলিং’। ফলে কোন চাল কোন ধান থেকে আসছে তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না ক্রেতার।

দেখতে চিকন ও চকচকে হলেও রাইস মিলিংয়ের সময় চালে বিদ্যমান প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের মতো পুষ্টিগুণগুলো চলে যায়।

এফপিএমইউ প্রকাশিত ২৫ পৃষ্ঠার ওই গবেষণাতে বলা হয়, ‘যেহেতু রাইস মিলিং বা চালের আকার-আকৃতি বদলানো এবং ব্র্যান্ডিং নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি নেই; তাই তারা নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছে এবং ক্রেতাদের এই চাল কিনতে বাধ্য করছে।’ এদিকে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের নামে অন্যান্য জাতের চাল বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন রাইস মিলাররা।

Manual5 Ad Code

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিল মালিক বলেন, বাজারে মিনিকেটের প্রচুর চাহিদা থাকায় এই পন্থা অবলম্বন করেন তারা। এমনকি কখনো কখনো চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code