১৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলায় বিপর্যস্ত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শাফিনা আক্তার ও তাঁর পরিবার

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ২৯, ২০২৪, ০৩:১৪ অপরাহ্ণ
বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলায় বিপর্যস্ত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শাফিনা আক্তার ও তাঁর পরিবার

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিলেটের রাজনীতিতে এক দুঃখজনক মোড় নিয়েছে। সন্ত্রাস, ভয়ভীতি, এবং হত্যার হুমকির মধ্য দিয়ে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা, বিশেষত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নারীদের অবস্থান। সম্প্রতি যুব মহিলা লীগের নেত্রী শাফিনা আক্তার ও তাঁর পরিবারের উপর বিএনপি ও জামায়াতপন্থী একটি চক্রের চরম হামলার অভিযোগ উঠেছে, যা শুধু ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক কোনো শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ নয় বরং এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক সহনশীলতার উপর এক ভয়ানক আঘাত।

ঘটনাটি ঘটে কয়েক দিন আগে রাতের বেলা, যখন পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিকভাবে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে মুখোশধারী একদল লোক শাফিনা আক্তারের পারিবারিক বাড়িতে প্রবেশ করে চিৎকার করে জানতে চায়, ‘ফারিয়া জান্নাত কোথায়?’ তাদের অপ্রত্যাশিত আগমন এবং হুমকির ভাষা দেখে পুরো পরিবার আতঙ্কে পড়ে যায়। চিৎকার শুনে বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন শাফিনার চাচাতো ভাই মাহিন আহমেদ। তিনি প্রশ্ন করেন, “কেন এত চিৎকার করছেন? এখানে কী হচ্ছে?” এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে হামলাকারীরা। তারা বলে, “ফারিয়া জান্নাত পালিয়ে গেছে। তার ঠিকানা দাও, না হলে বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলব।”

মাহিন জানিয়ে দেন, তিনি জানেন না ফারিয়া কোথায় আছে। উত্তরে তাঁকে ঘিরে ধরে সন্ত্রাসীরা এবং নির্মমভাবে মারধর শুরু করে। মাহিনের চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসলে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই হামলাকারীরা বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত একটি চক্র, যারা দীর্ঘদিন ধরে সিলেট এলাকায় ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছে।

এলাকাবাসী এবং যুব মহিলা লীগের স্থানীয় নেতাদের সূত্রে আরো জানা যায় যে, “শাফিনা আক্তার বহুদিন ধরে দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও নেত্রী। তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা ও জনপ্রিয়তাই এই হামলার মূল কারণ।”

হামলার পর থেকে শাফিনা আক্তার চরম মানসিক চাপ ও ট্রমার মধ্যে আছেন। তাঁর স্নায়ুব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শুধু তাই নয়, পরিবারে থাকা মা, বোন ও অন্যান্য সদস্যরাও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রাণভয়ে তাঁরা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে তাঁদের।

শাফিনা আক্তার ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার ও প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট দাবি জানানো হয়েছে। তারা অবিলম্বে পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ডিজিটাল ফরেনসিক তদন্ত করে হুমকি প্রদানের সোর্স চিহ্নিত করা নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পূর্ণ তদন্তের জোর দাবি জানান।

এই ঘটনাটি পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেয়, দেশে রাজনৈতিক মতভেদকে দমন করতে এখন খোলা সন্ত্রাস বেছে নিচ্ছে একটি চক্র। যদি এই ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত না করা হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে তা হবে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে আরও প্রশ্রয় দেওয়া।

এই ঘটনার মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের উপর বড় ধরনের প্রশ্ন উঠে এসেছে। একজন নারী নেত্রী ও তাঁর পরিবার যদি এইভাবে আতঙ্কে থাকতে বাধ্য হন, তবে সাধারণ নারীদের নিরাপত্তা কতটা অনিশ্চিত—তা সহজেই অনুমেয়।

এই হামলা কোনো একক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি রাজনীতিতে সক্রিয় প্রতিটি নারীর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর বার্তা। তাই সময় এসেছে সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এগিয়ে এসে এর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানানোর।

আজ যদি শাফিনা আক্তারের মতো একজন পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ—এই প্রশ্ন আজ আমাদের সকলের সামনে।

আশা করা যায়, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান ও বিচার নিশ্চিত করবেন। না হলে, এ দেশের নারী রাজনীতিকদের সামনে ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে