ডেস্ক রিপোর্ট::
বাংলাদেশে এতবড় গণহত্যা করার পরও ফ্যাসিস্টদের কোনো অনুশোচনা নেই, এখনো তারা চক্রান্ত করে চলেছে। আর যারা এ বিচার বিনস্ট করার চেস্টা করবে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো জঘন্য অপরাধ পাকিস্তানি হানাদাররাও করেনি। এর বিচার যারা করবে না, তারা আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের কোনো অনুশোচনা নেই, এখনো যারা চক্রান্ত করে চলছে। এমনভাবে অকাট্য সাক্ষ্য আমরা রেখে যাব, চাইলেই ভবিষ্যতে কোনো সরকার গণহত্যার বিচারে শৈথিল্য করতে পারবে না।
জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াতজুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং নির্দেশদাতারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারল, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং এরও বিচার হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতে বিচার হবে এবং ট্রাইব্যুনাল রায় দেবে, কিন্তু তাদের অনেকেই সত্যিকারের বিচারের মুখোমুখি হবেন না—এটা মেনে নেওয়া যায় না। ফলে রায় হলেও অনেক অপরাধী শাস্তির বাইরে থেকে যাবেন। বিচারপ্রক্রিয়ার এই দিকটি নিয়ে ভাবতে হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িত শীর্ষপর্যায়ের একটি বড় অংশের বিচার সম্পন্ন হবে।
জুলাই গণহত্যার বিচারে বাধা সৃষ্টিকারীরা ইতিহাসে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেজুলাই গণহত্যার বিচারে বাধা সৃষ্টিকারীরা ইতিহাসে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে
তাজুল ইসলাম বলেন, মোবাইল কোর্ট ও গণহত্যার বিচার এক বিষয় নয়। তাই এই বিচার সময় নিয়ে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে কোনো সরকার বা আন্তর্জাতিক মহল এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে—সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন—পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে বিভিন্ন বিপ্লবে বিভিন্ন নায়কের জন্ম হয়, জুলাই বিপ্লবের নায়করা তেমনি ভবিষ্যতে এদেশের দীপশিখা হয়ে থাকবে। মুগ্ধ, ইয়ামিন, আনাসসহ শত শহীদরা এ দেশে আমাদের বিপ্লবের নায়ক হিসেবে থাকবে।
মাহমুদুর রহমান বলেন—সবচেয়ে অনুতাপের বিষয় হচ্ছে যারা এ গণহত্যা চালিয়েছিল সেই ফ্যাসিস্টদের কাউকেই এখনো পর্যন্ত অনুশোচনা করতে দেখি না। তারা এক দানব সিস্টেম তৈরি করেছিল এদেশে । এই গণহত্যা শুধু গাজার গণহত্যার সঙ্গেই তুলনীয়, তাও সেটি ভিন্ন জাতিরা চালাচ্ছে অন্য জাতির বিরুদ্ধে। কিন্তু হাসিনা এ জাতির বিরুদ্ধেই গণহত্যা চালিয়েছিল।
জুলাই গণহত্যার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিচার হতেই হবে। যারা এ বিচার বাধাগ্রস্ত করবে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
বিগত ১৫ বছরে তার প্রতি হাসিনার দমন পীড়নের সামান্য কিছু বিষয় উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন—আমার বিরুদ্ধে ১২৫টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল, যার মধ্যে হাসিনার পুত্র জয়কে হত্যা প্রচেষ্টার মতো সাজানো মামলাও ছিল।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন—জুলাই যোদ্ধা আরমান হোসাইন, শহীদ মুদ্ধ’র পিতা মির মোস্তাফিজুর রহমান, শহীদ ইয়ামিনের পিতা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মাইলস্টোন এবং জুলাই আন্দোলন এবং মাইলস্টোন দুর্ঘটনা নিহত আহতদের স্মরণে দোয়া পরিচালনা করেন যুগ্ম সচিব নুরুল আমিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের।
এছাড়া অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ‘ট্রায়াল অব জুলাই কার্নেজ’ শীর্ষক একটি হৃদয়বিদারক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।