নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
১০ জুলাই বৃহস্পতিবার। যে মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভয়াবহ রূপধারণ করে সেই মাসেই সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সেই আওয়ামী লীগের দোসর ডা. সুদর্শন সেনকে নিয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন দফতর পরিদর্শন করেন। এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।

হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠে ঢাকা শহর। কোটা আন্দোলনে জুন মাসে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। জোরদার হয় আন্দোলন। এরই মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বদলে যায় দৃশ্যপট।

কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাই ২০২৪ থেকে সমগ্র দেশে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠে। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাজপথ কাপিয়ে তুলেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবির পরিবর্তে চলে আসে এক দফা দাবি। ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি। আন্দোলন সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে এ যেন অন্য রকম রূপ নেয় সারা দেশে।

১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয়। জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত হাজার হাজার ছাত্র জনতা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের দোসরদের হামলায় আহত হন। নিহত হন সহস্রাধীক ছাত্র-জনতা। রাজপথে রক্তের বন্যা ভেসে যাচ্ছে তবুও আন্দোলন থামাননি ছাত্র জনতা।

এদিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা পঃপঃ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সুদর্শন সেন ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অশ্লীল বাক্য লেখাসহ এক দফা কবর দেয়া নিয়ে তার সামাজিক যোগাযোগ ফেইসবুকে পোস্ট করতে থাকেন এই আওয়ামী লীগের দোসর ডা. সুদর্শন সেন। অবশ্য ৫ আগস্টের পর একে একে সকল পোস্ট ডিলিট করে দেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত ৪ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সিলেটের গোলাপগঞ্জে সমগ্র দেশের ন্যায় আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। সকাল থেকে পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামী লীগের দোসররা গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদর, ঢাকাদক্ষিণ বাজারে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। একে একে নিহিত হন ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ ৬ জন।

আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রক্তাক্ত অবস্থায় আনা হচ্ছে। এক পর্যায় এই আওয়ামী লীগের দোসর ডা. সুদর্শন সেন হাসপাতালের গেইট বন্ধ করে দেন। তখনকার সময় এক সাংবাদিক, শহীদ তাজ উদ্দিন, ডা. শাহিনুর ইসলাম শাহিনসহ স্থানীয় অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ওই আওয়ামী লীগের দোসর ডা. সুদর্শনের বিরুদ্ধে। পরে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের গেইট খুলে দিতে সক্ষম হন ডা. সুদর্শন। অবশ্য আজ সেই ডাক্তারের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কথা বলবেন না ডা. শাহিন। কারণ বড়কর্তার বিরুদ্ধে কথা বললে এভাবে যুগ পাড়ি দিয়ে একই কর্মস্থলে চাকরি করবেন কিভাবে। আজ শহীদ তাজ উদ্দিন বেঁচে থাকলে ওই ঘটনার স্বাক্ষী থাকতেন। তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি।

অবশ্য ৪ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখের ১২ ঘটিকা থেকে ১ ঘটিকা পর্যন্ত হাসপাতালের সিসি ক্যামেরায় চোখ রাখলেই সেই দোসর আওয়ামী লীগের এজেন্ডা ডা. সুদর্শন সেনের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হতো। সেই আওয়ামী লীগের দোসর ঘটনার প্রায় ১ বছর হলেও তিনি উপজেলার দলীয় নেতার ছত্র ছায়ায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন। হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে কোন মামলা। নেয়া হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ।

এত অপরাধ করে ঘটনার প্রায় ১ বছর ধরে গোলাপগঞ্জের ৬ শহীদদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আওয়ামী লীগ স্টাইলে হাসপাতাল চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর খুঁটির জোর কোথায় সেটি নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।

অপর দিকে স্বার্থ হাসিলের জন্য কিছু রাজনৈতিক নেতাদের ছত্র ছায়ায় সেই দোসর বেপরোয়া। তাঁর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে গোলাপগঞ্জের ৬ শহীদসহ শত শত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সাথে অবমাননা করা হচ্ছে।

এদিকে ১০ জুলাই ২০২৫ যে মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভয়াবহ রূপধারণ করে সেই মাসেই সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সেই আওয়ামী লীগের দোসর ডা. সুদর্শন সেনকে নিয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন দফতর পরিদর্শন করেন। এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।